মানবিকতার সাধনায় বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব ২০১৭

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সিলেট শহরে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত দশ দিনব্যাপী এক সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করেছে। এই উৎসবে আমরা বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যিক প্রবাহ, সমকালীন জীবনসংস্কৃতি ও জীবনধারার নানা দিক উপস্থাপন করার জন্য সচেষ্ট রয়েছি। সংগীতে, নাটকে, নৃত্যে, লোকসংগীতে বাঙালি সংস্কৃতির নানা কৌণিক দিক যাতে প্রতিফলিত হয় সে প্রয়াস অব্যাহত আছে। এ ছাড়া চলচ্চিত্র, কারুশিল্প, মিষ্টি, বাদ্যযন্ত্র ও স্থাপত্য প্রদর্শনীও এই উৎসবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন-সমর্থিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলম আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই সাংস্কৃতিক উৎসবে যুক্ত হয়ে সিলেট শহরে তিন দিনব্যাপী এক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করেছে। পুরো আয়োজন উৎসর্গ করা হয়েছে জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের স্মৃতির প্রতি।

বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের নিবদেক ইনডেক্স গ্রুপ। সহযোগিতা করছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। উৎসবের সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই।

বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চা এবং সাধনাকে গতিময় ও বহুমাত্রিক করার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চর্চা ও প্রয়াসের অব্যাহত ধারার অংশ হিসেবেই এই সংস্কৃতি উৎসব। আমরা বিশ্বাস করি, মানবিক হওয়ার সাধনায় এই উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রকরণ

উৎসবে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা,খায়রুল আনাম শাকিল, অদিতি মহসিন, চন্দনা মজুমদার, জলের গান, কুদ্দুস বয়াতীসহ বাংলাদেশের ৩৮৩ জন সংগীতশিল্পী-নৃত্যশিল্পী-চিত্রকর-নাট্যকুশলী-লেখক-কবি অংশগ্রহণ করবেন। সংগীত পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতীয় শিল্পী হৈমন্তী শুকলা, শ্রীকান্ত আচার্য্য, মনোময় ভট্টাচার্য্য, জয়তী চক্রবর্তী ও পার্বতী বাউলকে। বিশিষ্ট চিত্রকর রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, শহিদ কবির, রোকেয়া সুলতানা, জামাল আহমেদ, শিশির ভট্টাচার্য্য, তৈয়বা লিপিসহ ২৭ জন শিল্পী উৎসব চলাকালীন ‘সুবীর চৌধুরী আর্ট ক্যাম্পে’ অংশগ্রহণ করবেন। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, শাহীন আখতার ও হরিশংকর জলদাস, প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সনৎকুমার সাহা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শামসুজ্জামান খান, কবিকায়সার হক, আনিসুল হক, রুবি রহমান, রবিউল হুসাইন, তারেক সুজাতসহ বাংলাদেশের মোট ৫০ জন কবি ও লেখক কালি ও কলম সাহিত্যসভায় অংশ নেবেন। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, প্রথিতযশা মঞ্চ-অভিনেতা ও নির্দেশক শাঁওলি মিত্রসহ ভারতের ২৩ জন প্রাবন্ধিক, কবিও সাহিত্যিক এবং নেপালের ২ জন বিশিষ্ট লেখক সাহিত্যসভায় যোগ দেবেন।

উৎসবে বাংলাদেশের ১০টি জেলার কারুশিল্প নিয়ে থাকবে কারুমেলা। চলচ্চিত্র উৎসবে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’, মোরশেদুল ইসলামের ‘অনিল বাগচীর একদিন’, তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’, ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’, নাসিরুদ্দীন ইউসুফের ‘গেরিলা’, রুবাইয়াৎ হোসেনের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ ও ছোটদের ছবিসহ মোট ১৪টি ছায়াছবি নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হবে। চারটি নন্দিত মঞ্চনাটক – সুবচনের ‘মহাজনের নাও’, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘আমেনা সুন্দরী’, লোকনাট্যদলের ‘কঞ্জুস’ এবং মণিপুরী থিয়েটারের ‘কহে বীরাঙ্গনা’ উৎসবে মঞ্চস্থ হবে। উৎসব প্রাঙ্গণে উপস্থাপিত হবে বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। থাকবে বইমেলা। সিলেট জেলার ঐতিহ্যবাহী ঝুমুর, ধামাইল, সুফি ও সাধনসংগীত, চা জনগোষ্ঠি, মণিপুরী ইত্যাদি আঞ্চলিক গান ও নাচ উৎসবের বিভিন্ন দিন মঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।

সিলেটের ঐতিহ্য ও উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে থাকবে স্থিরচিত্র প্রক্ষেপণ (ডিজিটাল ডিসপ্লে)। সিলেট শহরকে আরো পরিবেশ ও মানববান্ধব করার বিভিন্ন প্রয়াস ও চিন্তা সমন্বয় করে উপস্থাপন করা হবে স্থাপত্যবিষয়ক প্রদর্শনী।

সমাজ ও ঐতিহ্যচেতনায়, প্রজ্ঞায় ও সৃজনী-উৎকর্ষে অমর হয়ে আছেন সিলেট অঞ্চলের অগণিত মানুষ। এমন কয়েকজন মহান ব্যক্তির নামানুসারে আমরা উৎসবস্থলের চত্বর ও মঞ্চগুলোর নামকরণ করেছি। আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে প্রধান মঞ্চটি অসামান্য মরমী কবি দেওয়ান হাছন রাজার নামে‘হাছন রাজা মঞ্চ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। মাঠের প্রধান চত্বর যেখানে বাদ্যযন্ত্র ও সিলেট অঞ্চলের লোকগানের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী থাকবে, সেটি বাউল গানের কিংবদন্তি শিল্পী শাহ আবদুল করিমেরনামানুসারেনামকরণ করা হয়েছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী স্মরণেজিমনেসিয়ামের ভেতরে সাহিত্যসভা, মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য যে মঞ্চটি থাকছে তার নাম রাখা হয়েছে ‘সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চ’। কারুশিল্প প্রদর্শনীর চত্বরটি লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের অগ্রপুরুষ ও ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আইসিএসগুরুসদয় দত্তের নামে নামকরণ করা হয়েছে। স্থাপত্য প্রদর্শনী ও স্থিরচিত্র প্রক্ষেপণের জন্য নির্মিত তোরণটিকে কুশিয়ারা কলোনেডনামে অভিহিত করা হয়েছে। আর্ট ক্যাম্পের বেদীটিকে ‘রাধারমণ দত্ত বেদী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সিলেট অঞ্চলের প্রজ্ঞাবান মানুষের তালিকা প্রায় অনিঃশেষ। আমরা চেষ্টা করব উৎসবের ানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই মনীষীদের পরিচয় তুলে ধরতে ও তাঁদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে। আমরা বিশ্বাস করি, বিষয়বৈচিত্র্যে ও প্রকরণে এই উৎসবটি বাংলাদেশে সংস্কৃতিচর্চায় নতুন মাত্রা সঞ্চার করবে।

অনুষ্ঠান

হাছন রাজা মঞ্চ (আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠের প্রধান মঞ্চ)
আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬.২০ মি (শেষ দুদিন ২ ও ৩ মার্চ বিকেল ৪টায়) হাছন রাজা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানচলবে।

শাহ আবদুল করিম চত্বর (আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠের কেন্দ্রীয় চত্বর)
উৎসবকালীন বাদ্যযন্ত্র ও সিলেট অঞ্চলের লোকগানের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী চলবে এই চত্বরে

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চ (জিমনেসিয়াম, আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স)
২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবেকালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন, প্রতিদিন সকাল ১০.৩০ মি. থেকে বিকেল ৫.৩০ মি পর্যন্ত।

সাহিত্য সম্মেলন বাদে অন্যান্য দিন বিকেল ৪টা থেকে চলবে বাংলা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।
২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং ২ ও ৩ মার্চ প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে মঞ্চনাটক পরিবেশিত হবে।

গুরুসদয় দত্ত চত্বর (আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণ)
এই চত্বরে বসবে ১০টি জেলার কারুপণ্য নিয়ে কারুমেলা। থাকবে বেঙ্গল প্যাভিলিয়ন।

রাধারমণ দত্ত বেদী (আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠের পূর্ব সীমানায়)
প্রতিদিন সন্ধ্যায় চলবে আর্ট ক্যাম্প

কুশিয়ারা কলোনেড (আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সসুইমিং পুল বরাবর)
কলোনেড বরাবর থাকবে স্থাপত্য প্রদর্শনী

উদ্বোধন ও সূচনাঅনুষ্ঠান
আগামী বুধবার ২২ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব উদ্বোধন করতে সম্মত হয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত, এমপি।উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঞ্চে আরো থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর, এমপি, ইনডেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিয়া তাজীন এবং ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. এ কে মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

উৎসবের তৃতীয় দিন শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব একেএম মোজাম্মেল হক উৎসবের ষষ্ঠ দিন সোমবার ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানেরসূচনাকরবেন। উৎসবের সমাপনী দিনে শুক্রবার ৩ মার্চ প্রধান অতিথি থাকতে সম্মত হয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব রাশেদ খান মেনন, এমপি। এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্য দিন উপস্থিত থাকবেন।

উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ

১. আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে শুক্রবার ৩ মার্চ পর্যন্ত সিলেটের আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে দশ দিনব্যাপী বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
২. অনলাইনে নিবন্ধন করে উৎসবে বিনামূল্যে প্রবেশের পাস সংগ্রহ করতে হবে। আজ রোববার ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন শুরু। এ ছাড়া মোবাইলেও নিবন্ধন করা যবে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নির্ধারিত স্থানে নিবন্ধনের জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বুথ স্থাপন করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলেও নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।
৩. অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানে কোনো প্রবেশ ফি নেই।
৪. সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর/ পাসপোর্ট নম্বর বা অন্য কোনো বৈধ পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করা যাবে না।
৫. ছাত্রদের জন্য নির্বাচিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত রুটে বাস চালু করা হবে।
৬. মাঠে নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঢোকার সময় গেটে পূর্ণাঙ্গ সিকিউরিটি চেক হবে।
৭. মাঠে পেশাদার ক্যামেরা (নিবন্ধিত ফটো সাংবাদিক ব্যতীত), খাবার, কোনো প্রকার পানীয় বা ধূমপানের সরঞ্জাম নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। উৎসব প্রাঙ্গণে সুলভমূল্যেখাবার পাওয়া যাবে। বিনামূল্যে খাবার পানির ব্যবস্থা থাকবে।
৮. উৎসব প্রাঙ্গণে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই।
৯. নীতিমালা অনুযায়ী প্রেস এবং মিডিয়ার জন্য সংবাদ সংগ্রহের সুবিধা থাকবে।
১০. খবরাখবরের জন্য দেখুন    www.bengalculturalfest.com
https://www.facebook.com/BengalFoundation/
https://twitter.com/trustforthearts
https://www.instagram.com/BengalFoundation/

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব ২০১৭-এর নিবেদক ইনডেক্স গ্রুপ। আয়োজন সমর্থন করছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। সম্প্রচার সহযোগী হিসেবে রয়েছে চ্যানেল আই। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার কালি ও কলম এবং আইস টুডে। আপ্যায়ন সহযোগী পাতুরি। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনায় ব্লুজকমিউনিকেশনস। সহযোগী হিসেবে আছে বেঙ্গল ডিজিটাল ও বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়।

জ্ঞানতাপস আব্দুররাজ্জাক (১৯১২-৯৯)

জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী এক মানুষ। তাঁর পা-িত্যের খ্যাতি ছিল কিংবদন্তিতুল্য। জীবনের এক পর্যায়ে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন পাশ্চাত্যে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সংকট নিরসনকল্পে তৎকালে তিনি যে ভাবনা-উদ্রেককারী উদ্যোগ ও এ অঞ্চলের বাঙালির সকল শোষণ ও বঞ্চনার অবসানের জন্য যে প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন তা ইতিহাসের অন্তর্গত হয়ে আছে।
তাঁর পঠন-পাঠনের ঈর্ষণীয় ব্যাপ্তি মনীষা ও প্রজ্ঞা উত্তরকালের শিক্ষার্থীদের সবসময় উদ্দীপ্ত করেছে। যেকোনো সংকটে তাঁর ভাবনা পথচলায় সহায়ক হয়ে ওঠে।

আমরা বহুগুণান্বিত এই জ্ঞানবান মানুষকে এই সংস্কৃতি উৎসব উৎসর্গ করছি।

আমাদের কথা

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা ও প্রবহমান সাংস্কৃতিক ধারাকেনবীন দৃষ্টিভঙ্গিতে সঞ্জীবিত করা এবং এই ধারার আলোকে চর্চা ও সাধনা অব্যাহত রাখাই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন একটি ট্রাস্ট যা বেঙ্গল গ্রুপের সহায়তায় পরিচালিত। এখানে কোনো সরকারি সহায়তা বা বিদেশী অনুদান নেই। ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা বর্তমান সভাপতি আবুল খায়ের। বোর্ডের অন্যান্য ট্রাস্টিরা হলেন প্রফেসর এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান,মমতাজ খালেক, রুবি গজনবী, আবুল হাসনাত, ড. শাফকাত হোসেন খন্দকার, শাহ সৈয়দ কামাল, লুভা নাহিদ চৌধুরী ও নওশিন খায়ের। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রয়াসের সঙ্গে প্রায় দুই শতাধিক কর্মী ক্তযু আছেন।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ছাব্বিশ বছর ধরে শিল্প-সংস্কৃতির নানা শাখা পরিচর্যা করে আসছে। সংগীত, চিত্রকলা, সাহিত্য, কারুশিল্প, স্থাপত্যচিন্তা, চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের মূল কাজ। সাহিত্য ও শিল্পবিষয়ক সাময়িকপত্রকালি ও কলম, শিল্প ও শিল্পী, যামিনী ও সিক্স সিজনস রিভিউ আমরা প্রকাশ করে থাকি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন বাংলা ভাষার প্রথম উল্লেখযোগ্য ই-বই প্রকাশ করে ২০১৬ সালে। প্রতিবছর নিয়মিতভাবে ৮০ জনকে আর্ট-সংগীত-কারুশিল্প-কবিতা ও প্রবন্ধ-গবেষণার জন্য অনুদান ও বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।

‘ভালো গান দিয়ে ভালো দিন আসুক’ এই স্লোগান বুকে ধারণ করে ১৯৮৭ সাল থেকে গানের অ্যালবাম প্রকাশ, সংগীতশিক্ষায় বৃত্তি প্রদান ও শিল্পীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান আমরা আয়োজন করেছি। ২০০৫-০৬ সালে জাতীয় ভিত্তিতে গানের পাঁচটি শাখায় প্রতিযোগিতামূলক বেঙ্গল বিকাশ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি আয়োজিত হয়। ২০০০ সাল থেকে শুরু হয় পরম্পরা উচ্চাঙ্গসংগীত কর্মশালা যার রেশ ধরে ২০১৪ সালে বিশিষ্ট গুরুদের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়’। সারা দেশ থেকে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের বাছাই করে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ে বিনামূল্যে উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে মিউজিক আর্কাইভ স্থাপন, ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে সংগীত-অবয়ব কর্মশালা পরিচালনা করা হয়। প্রতিবছরে মতো ২০১৫ সালে স্থানীয় উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পীদের নিয়ে সিলেটে আয়োজিত হয় সংগীতবিষয়ক নিরীক্ষাধর্মী কর্মশালা।

উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের আত্মপ্রকাশ ২০১২ সালে। আপনারা জানেন যে, ভারতবর্ষে উচ্চাঙ্গসংগীতের ভিত প্রতিষ্ঠায় যাঁদের অন্যতম অবদান রয়েছে এবং পঞ্চাশ-ষাটের দশকে ও পরবর্তীকালে শাস্ত্রীয়সংগীতের বার্তা যাঁরা সারাবিশ্বে পৌঁছে দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন খাঁ, আলী আকবর খাঁ, উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, আয়েতআলী খাঁ, বিলায়েৎ খাঁ সকলেরই পারিবারিক সূত্রে এদেশের মাটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ২০১২ সালে আমরা ধারণা করেছিলাম যে, নিয়মিতভাবে উৎসব আয়োজিত হলে তা জনরুচিকে প্রভাবিত করবে এবং উচ্চাঙ্গসংগীতের যে গৌরবময় উত্তরাধিকার আমাদের রয়েছে, তা উজ্জীবিত হবে। শিল্পী ও দর্শকের অংশগ্রহণের বিচারে এরই মধ্যে এই উপমহাদেশে তথা বিশ্বে সবচেয়ে বড় পরিসরের উচ্চাঙ্গসংগীত আসর হিসেবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশে নাট্যচর্চাকে উজ্জীবিত করতে ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আমরা গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করি। চলচ্চিত্রে রুচিবান দর্শক তৈরির লক্ষ্যে বেঙ্গল চলচ্চিত্র ফোরামের আওতায় ২০১৩ সালে সারা দেশ থেকে স্ক্রিপ্ট জমা নিয়ে নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহদানের যে-কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল, তার প্রথম চারটি চলচ্চিত্রের কাজ এখন চলছে। বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত ও বেঙ্গল এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত প্রথম ছবি জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’ টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শনের জন্য বিশেষভাবে নির্বাচিত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের কাহিনি অবলম্বনে রচিত মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ছবিটি বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। বর্তমানে গিয়াসউদ্দিন সেলিম নির্দেশিত ‘স্বপ্নজাল’ ও রাশেদ চৌধুরী নির্দেশিত ‘চন্দ্রাবতী কথা’ ছবির কাজ চলছে। বাংলাদেশের পেইন্টারদের নিয়ে এ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ৪৫টি ডকুমেন্টারি ফিল্ম।

সিলেটের এই উৎসব যে-মনীষীকে উৎসর্গ করা হয়েছে তাঁরবইপত্রের ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ।বাংলাদেশের শিল্পচর্চাকে উৎসাহিত করতে ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ও প্রয়োজনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের প্রথম পেশাদারি আর্ট গ্যালারি বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস, বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জ, ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস্ প্রিসিঙ্কট, এসএম সুলতান-বেঙ্গল আর্ট কলেজ (নড়াইল) এবং সফিউদ্দিন বেঙ্গল প্রিন্টমেকিং স্টুডিও। শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে পরিচালিত হয়েছে আর্ট ক্যা¤প। গত ষোল বছরে আয়োজিত প্রায় ৪০০ প্রদর্শনীকে ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে বহু মূল্যবান আর্ট ক্যাটালগ।২০১৬ সালে দেশের ৬৪ জেলায় ৭৫টি গণগ্রন্থাগারে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৪০,০০০ আর্ট ক্যাটালগ সম্প্রদান করা হয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সংগ্রহে রয়েছে এ-অঞ্চলের শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে ৫০০০টি শিল্পকর্মের সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য আর্ট কালেকশন্।

স্থাপত্যশিল্প, নদী, নিসর্গ ও জনবসতি সম্বন্ধে সমকালীন চিন্তা-ভাবনাকে উৎসাহিত করতে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস্ অ্যান্ড সেটেলমেন্টস্। দেশ বিদেশের সেরা চিন্তাবিদ কর্মকুশলী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইনস্টিটিউট থেকে স্থাপত্য ও ডিজাইন, অবকাঠামোগত পরিকল্পনা, নকশা ও বিন্যাসে ইতিহাসচেতনা ও স্বকীয় রুচি গঠনের উদ্দেশে প্রতি বছর দেশে ও বিদেশে আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম ও প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে প্রবেশ সবার জন্য উন্মুক্ত।

সাংস্কৃতিক চর্চার নানামুখী কর্মপ্রবাহের মধ্য দিয়েই জনরুচি, জীবন ও মননে মাত্রা সঞ্চার করতে আমরা প্রয়াসী।

Enter your keyword